আওয়ামীপন্থী বিচারপতি খিজির হায়াত অপসারিত
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক খিজির হায়াতকে অপসারণ করা হয়েছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে গত বছরের ২০ অক্টোবর বিচারকাজ থেকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো ১২ বিচারপতির একজন এই বিচারপতি খিজির হায়াত।
গতকাল বুধবার (১৯ মার্চ) আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জারী করা প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে, সংবিধানের ৯৬(৬) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি ১৮ মার্চ খিজির হায়াতকে অপসারণ করেন। প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষর করেছেন আইন ও বিচার বিভাগের সচিব শেখ আবু তাহের।
বাংলাদেশ সংবিধানের ৯৬ (৬) অনুচ্ছেদ অনুসারে, সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল তদন্ত শেষে রাষ্ট্রপতিকে যদি প্রতিবেদন প্রেরণ করে যে বিচারক দায়িত্ব পালনে অক্ষম বা গুরুতর অসদাচরণ করেছেন তবে কাউন্সিলের সুপারিশে রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অপসারণ করতে পারেন।
গত বছরের (২০২৪) ১৬ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টের সামনে ‘আওয়ামীপন্থী ফ্যাসিবাদী বিচারকদের অপসারণ’ দাবিতে হাজার হাজার বিক্ষুদ্ধ ছাত্র-জনতা প্রতিবাদ করে। এরই প্রেক্ষিতে খিজির হায়াতকে অপসারণ করা হয়েছে।
গত বছরের ২০ অক্টোবর থেকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে থাকা বিচারপতিরা হলেন— বিচারপতি আতাউর রহমান খান, বিচারপতি নাইমা হায়দার, বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ, বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার, বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাস, বিচারপতি খিজির হায়াত, এসএম মনিরুজ্জামান, খোন্দকার দিলীরুজ্জামান, বিচারপতি মো. আখতারুজ্জামান, বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিন, বিচারপতি আমিনুল ইসলাম ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসেন দোলন।
বাধ্যতামূলক ছুটিতে থাকা ১২ বিচারপতির মধ্যে বিচারপতি আতাউর রহমান এবং বিচারপদি আশীষ রঞ্জন দাসের বয়স ৬৭ পূর্ণ হওয়ায় অবসরে চলে গেছেন। বিচারপতি শাহেদ নুরউদ্দিন গত ফেব্রুয়ারি মাসে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেছেন। বিচারপতি আমিনুল ইসলাম ও বিচারপতি এসএম মাসুদ হোসেন দোলনের পদ নিশ্চিত না হওয়ায় তারা চাকরিতে নেই।
সুপ্রিম কোর্টের জনসংযোগ বিভাগ জানিয়েছে, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল বাধ্যতামূলক ছুটিতে থাকা ১২ বিচারপতির মধ্যে বাকি ৬ জনের বিষয়ে তদন্ত করছেন।
গত বছর (২০২৪) জুন মাসের ৫ তারিখ হাইকোর্টের বিচারপতি খিজির হায়াত ২০১৮ সালে বাতিল হওয়া সরকারি চাকুরীতে ৩০% মুক্তিযুদ্ধ বহালের রায় ঘোষণা করেন। এই রায়ের মধ্য দিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়। যার মধ্য দিয়ে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতন হয়।
বিচারপতি শাহেদ নুরউদ্দিন দ্রুত বিচার ট্রাইবুন্যাল ১ এর বিচারক থাকাকালে ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ২০২৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় দেন। রায়ে তৎকালীন বিএনপি সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৯জনকে মৃত্যু*দণ্ড এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন ট্রাইবুন্যালের রায়ে। গত বছরের ১ ডিসেম্বর হাইকোর্ট উক্ত রায় বাতিল করে সবাইকে খালাস দিয়েছেন।
বিচারপতি খিজির হায়াত ১৯৬৭ সালের ২৪ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে ১৯৯৭ সালে ঢাকা আইনজীবীর সমিতির সদস্য হিসেবে আইন ব্যবসায় শুরু করেন এবং ২০০১ সালে হাইকোর্টে আইনজীবী অন্তর্ভুক্ত হন। ২০১৮ সালের ৩১ মে হাইকোর্টে অস্থায়ী বিচারক হিসেবে নিযুক্ত হন এবং এর ২ বছর পর ২০২০ সালে হাইকোর্ট বিভাগের স্থায়ী বিচারক হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন।
ফেসবুকে ফলো করুন- Juristico