বিচারপতি অপসারণে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন
সংবিধানের ১৬তম সংশোধনী মামলার রায় ঘোষণা পর সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (৭ই নভেম্বর) আপিল বিভাগের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানান।
সুপ্রিম কোর্টের এ বিবৃতিতে বলা হয়, ‘৩ বিচারপতির বিরুদ্ধে উত্থাপিত অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়েছে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল’ শিরোনামে একটি স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেলে কর্তৃক বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় খবরটি প্রকাশিত হয়। খবরটি সুপ্রিম কোর্ট জনসংযোগ বিভাগের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। সংবিধানের ১৬তম সংশোধনী মামলার রায়ের পরে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠিত হলেও কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে কয়েকজন বিচারপতির তথ্য যাচাই-বাছাই কাজ চলমান থাকায় রাষ্ট্রপতির কাছে কাউন্সিল কর্তৃক কোনও অভিযোগ প্রেরণ করা হয়নি। বেসরকারি টিভি চ্যানেলটিতে প্রকাশিত সংবাদটি সম্পূর্ণ বানোয়াট, মিথ্যা, কাল্পনিক এবং ভিত্তিহীন। খবরে প্রকাশিত বিষয়টি অত্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ বিধায় সর্বসাধারণের অবগতির জন্য বিবৃতিটি প্রচারের জন্য অনুরোধ করা হলো।’
বাংলাদেশের উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অপসারণ সংক্রান্ত সংবিধানের বহুল আলোচিত ও সমালোচিত ১৬তম সংশোধনী বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের দায়ের করা ‘রিভিউ’ গত ২০ অক্টোবর পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করে রায় প্রদান করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
সংবিধানের ১৬তম সংশোধনীতে সংবিধানের ৯৬ নং অনুচ্ছেদ এর বাতিল হওয়া ২ থেকে ৮ উপ-অনুচ্ছেদ পুনর্বহাল করে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নের্তৃত্বে ৬ বিচারপতির আপিল বিভাগের বেঞ্চ এ ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করেন। এই রায়ের মাধ্যমে সংবিধানের ১৬তম সংশোধনী বাতিলের হাইকোর্ট বিভাগের রায় বহাল হয় এবং এর মধ্য দিয়ে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অপসারণ ক্ষমতা সংসদের কাছ থেকে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের কাছে ফিরেছে।
আপিল বিভাগের রায়ের পর সংবিধানের ৯৬ নং অনুচ্ছেদ অনুসারে প্রধান বিচারপতি ও জ্যেষ্ঠ ২ জন বিচারপতির সমন্বয়ে এ কাউন্সিল গঠিত হলো।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে বর্তমানে ছুটিতে থাকা ১৫ জন বিচারপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করার বিষয়ে তথ্য যাচাই-বাচাইয়ের কাজ চলছে।
১৯৭৯ সালের ৬ এপ্রিল সংবিধানের ৫ম সংশোধনীর মাধ্যমে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সংবিধানে উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অপসারণ সংক্রান্ত ক্ষমতা প্রদান করা হয় সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছে।
২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ১৬তম সংশোধনীতে উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অপসারণ সংক্রান্ত সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের ক্ষমতা বাতিল করে তা ফিরিয়ে দেওয়া হয় সংসদকে।
সংবিধানের ১৬তম সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০১৪ সালের ৫ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের ৯জন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। রিটের রুলে ২০১৬ সালের ৫ মে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে ১৬তম সংশোধনী বাতিল করে রায় দেন হাইকোর্ট।
হাইকোর্ট বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের ৪ জানুয়ারি আপিল দায়ের করেন রাষ্ট্রপক্ষ। আপিলের শুনানিতে ২০১৭ সালের ৩ জুলাই হাইকোর্ট বিভাগের রায় বহাল রেখে সর্বসম্মত ভাবে চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন ৭ বিচারপতির আপিল বিভাগীয় পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ। একই বছরের ১ আগস্ট ৭৯৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। এ রায় পুনর্বিবেচনার জন্য ২০১৭ সালের ২৪ ডিসেম্বর ‘রিভিউ’ পিটিশন দায়ের করে রাষ্ট্রপক্ষ। চলতি বছরের ২০ অক্টোবর শেখ হাসিনা সরকারের দায়ের করা সেই রিভিউ আবেদনটি নিষ্পত্তি করে চূড়ান্ত রায় প্রদান করেন আপিল বিভাগ।
রিভিউটি নিষ্পত্তির পর অ্যাটর্নি জেনারেল মো.আসাদুজ্জামান সংবাদ মাধ্যমকে জানান, “সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে অভিযোগ পড়লে তা প্রাথমিক ভাবে অনুসন্ধান করা হবে। কাউন্সিল যাচাই বাছাই করে অসদাচরণ বা দুর্নীতির (অর্থনৈতিক বা বুদ্ধিভিত্তিক) প্রমাণ পেলে প্রতিবেদন আকারে সুপারিশসহ তা রাষ্ট্রপতির কাছে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত চেয়ে পাঠাবেন।