অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সাংবিধানিক ও প্রশাসনিক সংস্কার প্রস্তাব
২০২৪ সালের জুলাই আগস্ট মাসে সংঘটিত ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে যাত্রা শুরু করা বিশ্বনন্দিত ব্যক্তিত্ব নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহম্মদ ইউনুসের নের্তৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে সাংবিধানিক ও প্রশাসনিক কিছু সংস্কার প্রস্তাব-
১. সংবিধান সংশোধন ও গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য বিষয়ে জনমত যাচাইয়ের জন্য গণভোট পদ্ধতি পুণঃপ্রবর্তন করা।
২. জাতীয় সংসদে জনপ্রতিনিধিত্ব এবং নীতিপ্রণয়নে পেশাগত ও বিশেষজ্ঞ মতামতের ভারসাম্য রক্ষার জন্য দ্বিকক্ষ চালু করা।
৩. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করণের লক্ষে সুপ্রীম কোর্ট ও অধ্বস্তন আদালতের জন্য বিচার মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণ বাতিল করে সুপ্রীম কোর্টের অধীনে পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করা।
৪. উচ্চ আদালতের বিচারক ও সাংবিধানিক স্বাধীন কমিশনসমূহের সদস্যগণের বিরুদ্ধে অভিযোগ শুনানি ও নিষ্পত্তির জন্য সুপ্রিম জুডিশিয়াল কমিশন গঠন করা।
৫. নির্বাচন কমিশনসহ সকল সাংবিধানিক স্বাধীন কমিশন গঠনে প্রধান বিচারপতি, ক্ষমতাসীন দলের প্রতিনিধি ১ জন, বিরোধী দলের প্রতিনিধি ১জন, রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতির মনোনয়নে ১ জন করে মোট ৫ জনের সার্চ কমিটি গঠনের আইন করা।
৬. মোবাইল কোর্টের নামে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের তথা আমলাদের ঔপনিবেশিক আচরণ ও ক্ষমতার অপব্যবহার বন্ধ এবং পেশাদারিত্ব ও নিরপেক্ষতার সাথে সুক্ষ্ণ ভাবে বিচার পরিচালনার জন্য শুধুমাত্র বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটদের দিয়ে মোবাইল কোর্ট ব্যবস্থা চালু করা।
৭. জনগণের মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার লক্ষে তথ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রন ও কর্তৃত্ব বাতিল এবং প্রিন্ট পত্রিকার ডিক্লারেশন পদ্ধতি বাতিল করে একটি স্বাধীন গণমাধ্যম ও সম্প্রচার কমিশন গঠন করে গণমাধ্যমের নিয়ন্ত্রণ নিবন্ধন ব্যবস্থা চালু করা।
৮. ব্যাপক প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ করা হোক। সকল সরকারি সেবা জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ের অফিসের মাধ্যমে দেয়া ।
৯. জনগণের ভোটে নির্বাচিত স্থানীয় সরকারে থাকা বিভিন্ন প্রতিনিধি- যেমন মেয়র, কাউন্সিলর, চেয়ারম্যান, ভাইস-চেয়ারম্যান ও মেম্বারদেরকে বরখাস্ত বা অন্যান্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের যে ক্ষমতা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রসাশক, উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা প্রয়োগ করেন তা বাতিল করে অভিযোগ শুনানি ও নিষ্পত্তির জন্য স্থানীয় সরকার কমিশন গঠন করা।
১০. প্রশাসনের জবাবদিহিতা নিশিচত করার লক্ষে ন্যায়পাল আইন কার্যকর করা। দুদকের শক্তি বৃদ্ধি করা।
১১. বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪ ও অন্যান্য জনস্বার্থ বিরোধী কালাকানুনসমূহ প্রয়োজনীয় সংস্কার করা।
১২. সাংবিধানিক স্বাধীন কমিশনে সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে সচিব বা সদস্য কিংবা কমিশনার হিসেবে হিসেবে নয়, কেবলমাত্র পর্যবেক্ষক সদস্য হিসেবে রাখা। এছাড়া কমিশনসমূহে এডমিন ও অন্যান্য সিভিল সার্ভিস ক্যাডারদের নিয়োগ করা যাবে না। কমিশন চলবে নিজস্ব জনবলে।
১৩. বিভাগ জেলা ও উপজেলায় প্রশাসনিক ইউনিটে বিভাগীয় কমিশনার জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের স্থলে জনপ্রতিনিধিগণকে প্রধান হিসেবে বসানো।
১৪. মানবাধিকার বিষয়ক ও অন্যান্য এনজিওসমূহকে সরকারের রাজনৈতিক হয়রানির কবল থেকে মুক্ত রাখার জন্য এনজিও বিষয়ক ব্যুরোকে স্বাধীন এনজিও কমিশনে রুপান্তর করা।
১৫. পুলিশের ঔপনিবেশিক আইনগুলো বাতিল করে পুলিশের আমূল সংস্কার করা।
১৬. সিআইডি ও পিবিআই উভয়ই পুলিশের অপরাধ তদন্ত ইউনিট। একই ধরনের দুটো ইউনিটের স্থলে পিবিআইকে অপরাধ তদন্ত বিষয়ক উচ্চতর স্বাধীন সংস্থায় রুপান্তর করা। প্রয়োজনে নাম পরিবর্তন করে ন্যাশনাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন- এনবিআই করা যেতে পারে। যাতে উচ্চমানের তদন্ত দ্রুততা নিরপেক্ষতা পেশাদারিত্বের সাথে সম্পন্ন করার জন্য সিভিল ইনটেলিজেন্স নিয়োগ করা যেতে পারে, এছাড়া পুলিশের পাশাপাশি প্রয়োজনে সেনা গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও কাজ করতে পারবেন।
১৭. পুলিশী হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যু নিরোধ আইন কার্যকর ভাবে বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়ন করা । রিমাণ্ডের নামে নির্যাতন, পুলিশের বিরুদ্ধে মামলাকারীকে নতুন করে হয়রানি ইত্যাদির জন্য নজরদারির ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
১৮. বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিংয়ের নামে ছাত্র নির্যাতন বন্ধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ইউজিসি ও বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের সমন্বয়ে একটি সমন্বিত জাতীয় এন্টি-র্যাগিং এজেন্সি গঠন করা। যার মাধ্যমে তড়িৎ প্রতিকারের জন্য অভিযোগ হটলাইন, ওয়েবসাইট বা এপস চালু করা।
১৯. ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু অধিকার সংরক্ষণে সাংবিধানিক কমিশন গঠন করা। কমিশনের অধীনে প্রতি জেলায় নিরপেক্ষ আইনজীবী সাংবাদিক শিক্ষক ও সুশীলসমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন স্থায়ী ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি গঠন করা। ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও প্রসিকিউশনের জন্য পুলিশ হেড কোয়ার্টারে ইউনিট গঠন করা।
২০. ধর্ম অবমাননা প্রতিরোধে কঠোর আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণ করা ।
২১. নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের অপব্যবহার বন্ধে প্রয়োজনীয় সংস্কার ও প্রতিকারের ব্যবস্থা করা।
২২. পাকিস্তানে থাকা বাঙালি এবং বাংলাদেশে থাকা বিহারী শরণার্থী সমস্যার যৌক্তিক সমাধান ।
২৩. ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের দ্বারা নির্বিচারে বাংলাদেশি নাগরিক হত্যা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ।
২৪. চিকিৎসকদের অবহেলা ও দুর্ঘটনাজনিত রোগীর মৃত্যু এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহ নিয়ে একটি কার্যকরী গণ-স্বাস্থ্য অধিকার আইন প্রণয়ন করা।
২৫. বৈধ অ্যাক্রিডিটেশন বা পরিচয়পত্রধারী সাংবাদিকদের বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার করা যাবে না। বৈধ অ্যাক্রিডিটেশন বা পরিচয়পত্রধারী সাংবাদিকের নামে ফৌজদারী মামলা দায়ের হলে মামলাটি প্রেস কাউন্সিল পরীক্ষা করে পেশাগত বিষয় কিনা নিশ্চিত করবে।
২৬. প্রতিবন্ধী, বিধবা, প্রবীণ ও এতিমদের সামাজিক নিরাপত্তা সুরক্ষায় আরো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাজেট বৃদ্ধি করা।
বাংলাদেশকে সুখী দারিদ্রমুক্ত বৈষম্যমুক্ত রাষ্ট্রে পরিণত করতে সুশাসন প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই। বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।
*Proposal Written by On behalf of Juristico: Wazed Nabi, Cheif Executive, Juristico.