আইন নিয়ে পড়াশোনা ও ক্যারিয়ার
সময়ের পরিক্রমায় আইনশাস্ত্র জ্ঞানের জগতে অপরিহার্য শাখা হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। দিন দিন আইন শিক্ষার শাখা যেমন সম্প্রসারিত হচ্ছে তেমনি কর্মক্ষেত্রে এর প্রভাব লক্ষণীয়।
আইন পড়ার জন্য যে যোগ্যতা লাগবে-
যেকোনো বিভাগ থেকে (বিজ্ঞান, বাণিজ্য, মানবিক, কারিগরি) হতে উচ্চমাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হওয়ার পর একজন শিক্ষার্থী মেধাক্রম ও যোগ্যতা অনুযায়ী আইন বিভাগে পড়ার সুযোগ পেয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীদের উচিত উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পরেই কাঙ্খিত বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি নিতে শুরু করা। এছাড়াও যেকোনো বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেও ২ বছর ব্যাপী এলএলবি কোর্স করার সুযোগ রয়েছে।
আইন পড়ার প্রতিষ্ঠানসমূহ-
যারা এইচএসসি পাশ করার পর ৪ বছরের এলএলবি (অনার্স) করবেন-তারা আমাদের দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবেদন করতে পারবেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকেই আইন বিভাগের কার্যক্রম চালু রয়েছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগও দেশের অন্যতম স্বনামধন্য আইন পড়ার প্রতিষ্ঠান। এছাড়াও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ত্রিশাল, ময়মনসিংহ, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বহু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে অনার্স পড়ার সুযোগ রয়েছে।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও দেশের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বর্তমানে আইন বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের অবস্থান লক্ষনীয়। দেশের প্রায় অর্ধশতাধিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন পড়ার সুযোগ রয়েছে। যাদের মধ্যে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় (BRAC), নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক, ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি অন্যতম।
এছাড়া যারা উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করে অনার্স বা ডিগ্রী সম্পন্ন করেছেন তারা যদি আইন পড়তে চান তাদের জন্য রয়েছে ল’ কলেজ। বাংলাদেশে প্রায় ৬০টির অধিক আইন কলেজ রয়েছে। যার মধ্যে সেন্ট্রাল ল’ কলেজ, সিটি ল’ কলেজ, বঙ্গবন্ধু ল’ কলেজ, ধানমন্ডি ল’ কলেজ, টঙ্গী ল’ কলেজ, মোমেনশাহী ল’ কলেজ অন্যতম। এসব কলেজ থেকে ২ বছরের এলএলবি ডিগ্রি সম্পন্ন করে এডভোকেটশীপ লাইসেন্স করার জন্য বাংলাদেশ বার কাউন্সিল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা যাবে।
উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা চাইলে ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের অধীনে এলএলবি কোর্স সম্পন্ন করে আইন বিষয়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ রয়েছে।
আইনের শিক্ষার্থীদের জন্য ইউরোপ আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার জন্য রয়েছে ব্যাপক সুযোগ সুবিধা। দেশে এলএলবি এলএলএম সম্পন্ন করার পর এমফিল, পিএইচডি বা মাস্টার্স করার জন্য দেশের বাহিরে সুযোগ রয়েছে। আইনের বিভিন্ন বিষয়ের উপরও উচ্চতর ডিগ্রি লাভের সুযোগ রয়েছে। যেমন- ক্রিমিনোলোজি, পরিবেশ আইন, সাইবার ক্রাইম, বার-এট-ল করার সুযোগ রয়েছে।
আইনে যা পড়ানো হয়-
আইন বিষয়ে অনার্স পড়ার সময় একজন শিক্ষার্থী আইনবিজ্ঞান (Jurisprudence), ইসলামি আইন, হিন্দু আইন, সাংবিধানিক আইন, চুক্তি আইন, ভূমি আইন, সম্পত্তি হস্তান্তর আইন, দণ্ডবিধি, প্রশাসনিক আইন, পরিবেশ আইন, অপরাধ বিজ্ঞান, ইকুইটি ও ট্রাস্ট আইন, টর্ট আইন, শ্রম আইন, আন্তর্জাতিক আইন, দেওয়ানী কার্যবিধি, ফৌজদারী কার্যবিধি, আয়কর আইন, নিবন্ধন আইন, তামাদি আইন, সাক্ষ্য আইন ও বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি আইন প্রভৃতি বিষয় পড়ে থাকে।
আইনে পড়াশোনার পর ক্যারিয়ার-
আইন বিষয়ে পড়াশোনার সময় শিক্ষার্থীদের ইচ্ছে থাকে বিচারক ও আইনজীবী হওয়ার। তবে কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থীরা যেসব চাকুরীর আবেদন করতে পারে সেইসব চাকুরীর আবেদন আইনের শিক্ষার্থীরাও করতে পারে। আইনে স্নাতক সম্পন্ন হবার পর বিসিএস, প্রভাষক, ব্যাংকার, বীমা, কোম্পানি, শিল্পপ্রতিষ্ঠান সমূহের সাথেও যুক্ত হতে পারে। শুধুমাত্র আইনে অনার্স সম্পন্ন করা শিক্ষার্থীরাই বিসিএস এবং জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষায় (সহকারী জজ) অংশ নিতে পারে। জুডিশিয়াল এবং বার পরীক্ষায় শুধুমাত্র আইনের শিক্ষার্থীরাই বসতে পারে। এছাড়াও সামরিক বাহিনীতে কমিশন অফিসার পদে ‘জজ এডভোকেট (JAG)’ হিসেবে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে লিগ্যাল অফিসার পদে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। যেখানে আইনের শিক্ষার্থীদের পদচারণা ব্যাপক। এসব প্রতিষ্ঠানে সাধারণ কর্মকর্তা হিসেবে কাজের পাশাপাশি আইন কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করা যায়। যা শুধুমাত্র আইনের শিক্ষার্থীদের জন্যই সংরক্ষিত।
আইনের শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থায় কাজ করার সুযোগ বিদ্যমান। জাতিসংঘের বিভিন্ন অঙ্গসংস্থা যেমন- জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসুচি (UNDP), বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO), আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (ILO), জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশন (UNHCR), জাতিসংঘ শিশু তহবিল (UNICEF), বিশ্বব্যাংক ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানে চাকুরীর সুযোগ রয়েছে। আইনে ডিগ্রিধারীদের বিদেশি দূতাবাসে আইন কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। এছাড়াও সরকিারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেমন- নির্বাচন কমিশন, রাজউক, দুদক, ওয়াসা, পিএসসি, বিটিআরসি, পিডিবি ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানসহ স্বায়ত্বশাসিত এবং আধাসরকারী ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ লাভের সুযোগ রয়েছে।
সুযোগ সুবিধা-
আইন বিষয়ে ক্যারিয়ার গঠন করলে অনেক ধরনের সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায়। আইন নির্ভর পেশার রয়েছে উচ্চ সম্মান। সমাজের নেতৃত্বদানে ভূমিকা রাখতে পারেন আইনজীবীরা। আইনজীবী হিসেবে ক্যারিয়ার গঠন করলে পেশায় যেমন স্বাধীনতা পাওয়া যায়, তেমনি বিপুল অর্থ আয়েরও সুযোগ রয়েছে।
*সারোয়ার কাশেম অপূর্ব: রিসার্চ এক্সিকিউটিভ, জুরিস্টিকো।