Law News

বিচার বিভাগের পৃথক সচিবালয় গঠনের কাজ শুরু

বাংলাদেশে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার পদক্ষেপের অংশ হিসেবে পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় গঠন করা হচ্ছে।  বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের অধীনে বিচার বিভাগীয় সচিবালয় গঠন করার সিদ্ধান্তে সুপ্রীম কোর্ট এবং আইন ও বিচার মন্ত্রণালয় ঐক্যমতে পৌঁছেছে। সুপ্রিম কোর্ট এবং বিচার মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মাঝে একাধিক বৈঠকের পর তারা এই সিদ্ধান্তে একমত হয়েছেন।  পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার জন্য সুপ্রিম থেকে প্রস্তাবিত সবিচালয়ের অর্গানোগ্রাম এবং খসড়া প্রস্তাব যাচাই বাছাই করছে বিচার মন্ত্রণালয়। বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে রুলস অব বিজনেস ও অ্যালোকেশন অব বিজনেসের যেসব সংস্কার প্রয়োজন, সেসবও বিবেচনা করছে মন্ত্রণালয়। খসড়া যাচাই বাছাই শেষে চূড়ান্ত হবার পরই বিচার বিভাগীয় সচিবালয় গঠনের আইন অধ্যাদেশ আকারে জারি করার জানিয়েছে মন্ত্রণালয়। এ সচিবালয়ের নাম কি হবে তাও পরীক্ষানিরীক্ষা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। বিচার বিভাগীয় সচিবালয় নাকি সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়- করা হবে তা নিয়ে চলছে আলোচনা।

আইন ও বিচার বিশেষজ্ঞগণ বলছেন, “বিচার বিভাগীয় সচিবালয় গঠিত হলে অধস্তন আদালতের বিচারক ও কর্মকর্তাদের পদায়ন, বদলি, পদোন্নতি, শৃঙ্খলা, ছুটি প্রভৃতি বিষয়ে প্রচলিত সুপ্রিম কোর্ট এবং বিচার মন্ত্রণালয়ের দ্বৈত শাসনের অবসান ঘটবে। নিশ্চিত হবে বিচার বিভাগের প্রকৃত স্বাধীনতা। অধস্তন আদালতের উপর সরকারের  রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ বন্ধ হবে।”

নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ সংক্রান্ত মাসদার হোসেন মামলার রায় ঘোষণার প্রায় ১৭ বছর পর পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছে নোবেলজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের নের্তৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ২০০৭ সালে ড. ফখরুদ্দীন আহমেদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে মাসদার হোসেন মামলার রায়ের আলোকে নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে পৃথক করা হয়। এরপর ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার টানা ১৬ বছর ক্ষমতায় থাকলেও পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার কোনো দৃশ্যমান বা অদৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।

চলতি বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের মধ্যদিয়ে দেশে রাজনৈতিক দৃশ্যপট পরিবর্তনের পর বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব গ্রহণের আড়াই মাসের মধ্যে পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তাঁর নির্দেশে সুপ্রিম কোর্ট গত ২৭ অক্টোবর বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠার খসড়াসহ সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা প্রেরণ করে।

উক্ত প্রস্তাবনা বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল। এরপর গত ১০ ডিসেম্বর হাইকোর্ট বিভাগের বিশেষ কর্মকর্তা মো. মোয়াজ্জেম হোসেনের নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রির ৩ সদস্যের দল আইন ও বিচার বিভাগের সচিবের কক্ষে বিচার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাগণের সাথে বিচার বিভাগীয় সচিবালয়ের বিভিন্ন কৌশলগত দিক উপস্থাপন করেন। এরমধ্য দিয়েই বিচার বিভাগীয় সচিবালয় গঠনের বিষয়টি বেগবান হয়।

সপ্রিম কোর্ট থেকে পাঠানো প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, বিচার বিভাগ পৃথকীকরণসংক্রান্ত মাসদার হোসেন মামলার রায়ে ক্ষমতার পৃথকীকরণের যে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে তার মূল উদ্দেশ্য হলো বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠা কার। বিগত বছরগুলোতে রাজনৈতিক সরকারের অনীহা ও আমলাতান্ত্রিক মানসিকতার কারণে বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ সম্ভব হয়নি। জুলাই-আগস্টে সংঘটিত ছাত্র-জনতার অবিস্মরণীয় গণঅভ্যুত্থানের পটভূমির আলোকে ঐ রায়ের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার এখনই শ্রেষ্ঠ সময়।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সংবিধানের ১০৯ নং অনুচ্ছেদে হাইকোর্ট বিভাগের উপর অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনালের তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা অর্পণ করা হয়েছে কিন্তু হাইকোর্ট বিভাগের এই তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ এখতিয়ার নিরঙ্কুশ নয়। প্রচলিত ব্যবস্থায় আইন মন্ত্রণালয় থেকে অধস্তন আদালতসংক্রান্ত প্রস্তাব আসার পরই হাইকোর্ট বিভাগ তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করা অত্যাবশ্যক বলে মনে করে সুপ্রিম কোর্ট।

 

আরো পড়ুন- সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করা হলো

 

You cannot copy content of this page