BlogFeature

পাবলিক প্রসিকিউটরের যোগ্যতা দায়-দায়িত্ব ও কার্যাবলি

পাবলিক প্রসিকিউটর (Public Prosecutor) বা সরকারি কৌঁসুলি ধারণা এবং পদটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যমান থাকলেও ভারতীয় উপমহাদেশে, বিশেষ করে বাংলাদেশে, এই পদটি ১৮৬১ সালের ভারতীয় দণ্ডবিধি (Indian Penal Code, 1861) এবং পরবর্তী সময়ে প্রণীত ১৮৬৯ সালের ফৌজদারি কার্যবিধির (Criminal Procedure Code) অধীনে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে চালু হয়।

 

পাবলিক প্রসিকিউটর কে?

পাবলিক প্রসিকিউটর (Public Prosecutor) হলেন একজন আইনজীবী যিনি সরকারের তথা রাষ্ট্রের পক্ষে ফৌজদারি মামলাগুলো আদালতে পরিচালনা করেন। তার মূল কাজ হলো অপরাধের বিচারিক প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করা। তিনি মামলার তদন্ত থেকে শুরু করে আদালতে অপরাধ প্রমাণ করা পর্যন্ত সকল ধাপে যুক্ত থাকেন। তার কাজ হল রাষ্ট্রের স্বার্থে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা এবং জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

 

পাবলিক প্রসিকিউটরের যোগ্যতা

১. আইন বিষয়ে ডিগ্রি: অবশ্যই আইন বিষয়ে স্নাতক (LLB) ডিগ্রি অর্জন করতে হবে।

২. আইনজীবী হিসেবে নিবন্ধন: পাবলিক প্রসিকিউটর হতে হলে ব্যক্তিকে অবশ্যই বার কাউন্সিলে নিবন্ধিত আইনজীবী হতে হবে।

৩. অভিজ্ঞতা: সাধারণত পাবলিক প্রসিকিউটর হতে হলে প্রার্থীকে কিছু নির্দিষ্ট সময় ধরে আইন পেশায় কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হয়। এটি বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ের হতে পারে।

৪. সততা ও নৈতিকতা: উচ্চ নৈতিক মানদণ্ড বজায় রাখা ও সততার সঙ্গে কাজ করা পাবলিক প্রসিকিউটরের গুরুত্বপূর্ণ গুণাবলি।

 

পাবলিক প্রসিকিউটরের কার্যাবলী

১. রাষ্ট্রের পক্ষে মামলা পরিচালনা: পাবলিক প্রসিকিউটর আদালতে রাষ্ট্রের পক্ষে ফৌজদারি মামলাগুলো পরিচালনা করেন এবং অপরাধীদের শাস্তি প্রদানের জন্য কাজ করেন।

২. প্রমাণ সংগ্রহ ও উপস্থাপন: তিনি আদালতে সাক্ষ্য ও প্রমাণাদি উপস্থাপন করেন এবং সঠিক বিচারিক প্রক্রিয়া নিশ্চিত করেন।

৩. সাক্ষীদের জেরা করা: সাক্ষীদের সাক্ষ্য জিজ্ঞাসাবাদ এবং জেরা করার মাধ্যমে মামলাকে সঠিক পথে পরিচালনা করা তার দায়িত্ব।

৪. অপরাধের বিচারে যুক্তি উপস্থাপন: পাবলিক প্রসিকিউটর মামলা পরিচালনার সময় অপরাধীদের দোষ প্রমাণের জন্য যুক্তি ও প্রমাণ উপস্থাপন করেন।

৫. আইনগত পরামর্শ প্রদান: পুলিশ বা তদন্তকারী সংস্থাকে মামলার তদন্তের জন্য আইনগত পরামর্শ প্রদান করেন, যেন অপরাধ প্রমাণের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া যায়।

৬. আপিল মামলা পরিচালনা: উচ্চ আদালতে মামলা আপিল হলে পাবলিক প্রসিকিউটর সেই আপিল পরিচালনা করেন।

৭ ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা: তার প্রধান দায়িত্ব হল মামলার সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করা এবং আদালতের মাধ্যমে দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি প্রদানে সহায়তা করা।

৮. আদালতের নির্দেশনা অনুসরণ: পাবলিক প্রসিকিউটর আদালতের নির্দেশনা অনুসরণ করে মামলা পরিচালনা করেন এবং আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেন।

 

পাবলিক প্রসিকিউটর কর্তৃক পরিচালিত মামলা সমূহ:

১. হত্যা মামলা।

২. ধর্ষণ মামলা।

৩. মাদক সংক্রান্ত মামলা।

৪. জালিয়াতি ও প্রতারণা মামলা।

৫. ডাকাতি ও চুরির মামলা।

৬. সন্ত্রাসবিরোধী মামলা।

৭. দাঙ্গা ও জনশৃঙ্খলা ভঙ্গের মামলা।

৮. যৌন হয়রানি ও নির্যাতনের মামলা,ইত্যাদি।

 

পাবলিক প্রসিকিউটরের দায়িত্ব ও কর্তব্য:

.১ বিচার প্রক্রিয়ায় সততা বজায় রাখা: পাবলিক প্রসিকিউটরের প্রধান কর্তব্য হল সঠিক বিচার নিশ্চিত করা এবং ন্যায়বিচারের জন্য কাজ করা।

২. দোষী ও নির্দোষের মধ্যে পার্থক্য করা: তিনি মামলার যুক্তি ও প্রমাণের ভিত্তিতে দোষী ও নির্দোষের মধ্যে পার্থক্য করতে সাহায্য করেন।

৩. রাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষা: পাবলিক প্রসিকিউটর সবসময় রাষ্ট্রের স্বার্থে কাজ করেন এবং জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিত করেন।

৪. ভুল তথ্য ও প্রমাণ প্রতিরোধ: আদালতে ভুল তথ্য ও প্রমাণ উপস্থাপন প্রতিরোধ করে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা তার দায়িত্ব।

পাবলিক প্রসিকিউটর বিচারব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যিনি ফৌজদারি মামলাগুলোতে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তার সততা, দক্ষতা ও পেশাদারিত্ব বিচার প্রক্রিয়ায় ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য অত্যন্ত জরুরি। পাবলিক প্রসিকিউটর দোষী এবং নির্দোষের মধ্যে পার্থক্য করতে, সঠিক প্রমাণ উপস্থাপন করতে এবং আইনগত প্রক্রিয়ার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তার অবদান বিচারব্যবস্থার কার্যকারিতা ও জনগণের অধিকার রক্ষায় অপরিহার্য।

*লেখক- মিতুল আহমেদ লিয়ন: এক্সিকিউটিভ মেম্বার, জুরিস্টিকো।

 

আরো পড়ুন- জেলা প্রশাসকের দায়-দায়িত্ব ক্ষমতা ও কার্যাবলি

You cannot copy content of this page