BlogFeature

দুর্নীতি দমন কমিশনের গঠন ক্ষমতা ও কার্যাবলি

বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন, সত্য অনুসন্ধান  ও দুর্নীতি নির্মূল করার লক্ষ্যে ২০০৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি গঠিত হয় বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশন বা সংক্ষেপে বললে দুদক। দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর প্রথম অধ্যায় অনুযায়ী  তিনজন কমিশনার দ্বারা স্বাধীন ও নিরপেক্ষ দুর্নীতি দমন কমিশন গঠিত হয় এবং তিনজন মধ্যে থেকে একজন কে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাহী বা চেয়ারম্যান হিসাবে নিয়োগ প্রদান করেন ।

বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন এর প্রধান কার্যালয় রাজধানী শহর ঢাকায় অবস্থিত। এছাড়াও বাকি বিভাগ গুলোতে জোনাল অফিস রয়েছে । যেমন :- চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর, ময়মনসিংহ।

দেশের  দুর্নীতি, অনিয়ম , অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, দুর্নীতি অনুসন্ধানসহ  দুর্নীতিমূলক কাজের  বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে বাংলাদেশের একমাত্র স্বীকৃত স্বাধীন সংস্থা হচ্ছে দুদক ।

দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদক এর  প্রধান কাজ হলো দুর্নীতির অভিযোগ যথাযথ তদন্ত করার মাধ্যমে দুর্নীতির সাথে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে বাংলাদেশ থেকে দুর্নীতি চিরতরে নির্মূল করা।

দুর্নীতি দমন কমিশনের ক্ষমতা

১. দুর্নীতি সংক্রান্ত অভিযোগ গ্রহণ ক্ষমতা

২. দুর্নীতির সাথে সম্পর্কিত এই সন্দেহে তলব করা ক্ষমতা

৩. দুর্নীতি হচ্ছে এই সন্দেহে বা অভিযোগে ভিত্তিতে  তদন্ত করা ক্ষমতা

৪. অপরাধীর অপরাধ প্রমাণ হলে চার্জশিট দাখিল ক্ষমতা

৫. দুর্নীতির সাথে জড়িত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা ক্ষমতা

৬. তদন্ত ও ন্যায়বিচার লক্ষ্যে প্রমাণ সংগ্রহ ক্ষমতা

৭. অপরাধীর সাজার জন্য সুপারিশ করা ক্ষমতা

৮. প্রয়োজন সাপেক্ষে বিশেষ টিম গঠনের ক্ষমতা

৯. সংস্থার পরিচয় গোপন রেখে গোপনীয়তা সাথে তদন্ত পরিচালনা ক্ষমতা

১০. সন্দেহজনক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার ক্ষমতা

১১. অভিযুক্ত ব্যক্তি বা সাক্ষীকে তলব করা ক্ষমতা

১২. তদন্তে প্রমাণ হয়েছে এমন এমন ব্যক্তির বা প্রতিষ্ঠানের বিরোধে আদালতে অভিযোগ দায়ের ক্ষমতা

১৩. রাষ্ট্রের বিভিন্ন সেক্টরে দুর্নীতি অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন প্রস্তুত করার ক্ষমতা

১৪. সরকারি বা বেসরকারি যেকোন প্রতিষ্ঠান আর্থিক লেনদেন বৈধতা যাচাই-বাছাই করা ক্ষমতা

১৫. বাজার মনিটরিং এর ক্ষমতা

১৬. সন্দেহভাজনকে দেশ ত্যাগ করতে নিষেধ করার ক্ষমতা

 

দুর্নীতি দমন কমিশন কার্যাবলী

সহজ করে বলতে গেলে উপরের দুদকের যে সকল ক্ষমতা কথা উল্লেখ করা হয়েছে তার সঠিক প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন এই হলো দুদকের কার্যাবলী । যেমন :-

১. দুর্নীতি অনুসন্ধান ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে  ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা

২. ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ করা

৩. সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধান ও বাজেয়াপ্ত করে, আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া

৪. ঘুষ আদান-প্রদান বিষয়ে অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া

৫. দুর্নীতির  তদন্ত রিপোর্ট তৈরি করা যাতে সে অনুযায়ী কতৃপক্ষ ব্যবস্তা গ্রহণ করতে পারে

৬. কোন জায়গায় অবৈধ ভাবে পদোন্নতি হচ্ছে এমন অভিযোগ আসলে তার অনুসন্ধান এ প্রতিবেদন প্রস্তুত করা

৭. অভিযুক্ত ব্যক্তি যাতে দেশ ত্যাগ না করতে পারে সেই বিষয় খেয়াল রাখা

৮. ব্যবসায়িক সিন্ডিকেট বন্ধ করা

৯. সন্দেহ ভাজন ব্যক্তির আর্থিক লেনদেন অনুসন্ধান

১০. দুর্নীতি মামলা আদালতে দাখিল করা

১১. দুর্নীতির বিচারাধীন মামলা গুলো অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করা

১২. বিশেষ দুর্নীতি ইস্যু নিয়ে জনসম্মুখে প্রতিবেদন প্রকাশ করা

১৩. প্রয়োজন সাপেক্ষে দুর্নীতি আইন গঠন ও সংস্কারের প্রস্তাব দেওয়া

১৪. দুর্নীতি নির্মূল জন্য দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়া এবং বাস্তবায়ন লক্ষ্যে কাজ করা

১৫. আন্তর্জাতিক সংস্থা গুলো সাথে তাল মিলিয়ে কাজ করা এবং তাদের সাথে অভিক্ষতা বিনিময় করা

১৬. মানুষকে দুর্নীতি না করতে সচেতন করা

 

দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪   সুন্দর ও স্পষ্ট ভাবে দুদক ক্ষমতা ও কার্যাবলী কথা বর্ণনা করা থাকলে ও তার সঠিক প্রয়োগ লক্ষ্য করা যায় না । এই ব্যর্থতা বা আশা অনুযায়ী ফল না পাওয়ার প্রধান  কারণ গুলো হলো :-

১. রাজনৈতিক চাপ

২. ভয়ভীতি ও হুমকি

৩. জনগণের অসহযোগিতা মূলক আচারণ

৪. বিচার বিভাগে অবহেলা এবং দীর্ঘ কার্যক্রম

৫. অপর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ

৬. টেকনোলজির অভাব

৭.. জনসচেতনতার অভাব

৮. উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পর্যবেক্ষণে অবহেলা

 

যে কোনো মোবাইল অপারেটর থেকে ১০৬ এ ফ্রি কল করে দুদকের কাছে অভিযোগ জানানো যায়।

*লেখক- তাকবীর হোসেন কিশোর: এক্সিকিউটিভ মেম্বার, জুরিস্টিকো।

 

আরও পড়ুন- জাতিসংঘ মহাসচিবের দায়দায়িত্ব ও কার্যাবলি

You cannot copy content of this page