BlogFeatureHome

গ্রেফতার এবং আটকের পার্থক্য

সাধারণ মানুষ ‘গ্রেফতার’ (Arrest) এবং ’আটক’ (Detantion) শব্দদুটোকে একই অর্থে ব্যবহার করলেও আইনের দৃষ্টিতে ‘গ্রেফতার’ এবং ’আটক’ শব্দদুটো ভিন্ন অর্থ বহন করে। সাধারণ ভাবে আদালতের আদেশ ছাড়া প্রশাসন বা আইনশুঙ্খলা বাহিনী কাউকে হেফাজতে নিলে তাকে আটক বলে। আদালতের আদেশে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাউকে হেফাজতে নিলে তাকে গ্রেফতার বলে।

গ্রেফতার এবং আটকের পার্থক্য

আটক (Detain): আদালতের আদেশ ছাড়া প্রশাসন বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোনো ব্যক্তিকে কোনো অপরাধমূলক কর্মকান্ড বা ক্ষতিকর কর্মকান্ড (Prejudicial Act) সংঘটন থেকে বিরত রাখার জন্য বা কোনো অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সন্দেহে জিজ্ঞাসাবাদ কিংবা তদন্তের জন্য বা অন্য কোনও কারণে তাদের হেফাজতে নিলে তাকে আটক বলা হয়। আটকের পর আটককৃত ব্যক্তির অপরাধ না পাওয়া গেলে ছেড়ে দেয়া হয়। অনেক ক্ষেত্রে মুচলেকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয়া হয়।

বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪– এ সরকারকে এ ধরনের আটকের ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। এ আইনে বলা হয়েছে, কালোবাজারি, মজুতদারি, চোরা কারবার, অপরাধমূলক কাজ, অন্তর্ঘাতমূলক কাজ, সংরক্ষিত এলাকায় বিনা অনুমতিতে প্রবেশ, সান্ধ্য আইন ভঙ্গ, জাল টাকা ছাপানো বা প্রচলন বা বিনিময় করা, খাদ্যদ্রব্য ঔষধ প্রসাধনী নকল বা ভেজাল করা, নিষিদ্ধ সংগঠনে কাজ করা, বন্ধু রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক নষ্ট করা বা নষ্ট করার চেষ্টা করা এবং জাতীয় নিরাপত্তায় বিঘ্ন করা বা বিঘ্ন করার চেষ্টা করা ইত্যাদি ক্ষেত্রে এই আইন প্রয়োগের মাধ্যমে আটক করতে পারে সরকার।

বিশেষ ক্ষমতা আইনে আটককৃত ব্যক্তিকে আদালতের হাজির করার বাধ্যবাধকতা নেই। সরকার গঠিত উপদেষ্টা পরিষদের হাজির করাতে হয়। উপদেষ্টা পরিষদের পরামর্শ অনুযায়ী সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। হাইকোর্টের বিচারক ছিলেন বা বিচারক হওয়ার যোগ্য ২ জন এবং সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা পদে আসীন আছেন বা ছিলেন এমন ১ জনসহ মোট ৩ জনের সমন্বয়ে এই উপদেষ্টা পরিষদ গঠিতহয়।  উপদেষ্টা পরিষদে আটককৃত ব্যক্তি নিজের সমর্থনে নিজেই বক্তব্য প্রদান করতে হয়, আইনজীবী নিযোগ করা যায় না। তবে এ আইনে বিচারের জন্য জেলা ও দায়রা জজের সমমর্যাদার বিশেষ ট্রাইবুনালও রয়েছে।

গ্রেফতার (Arrest):  ফৌজদারী আইনানুসারে আদালতের আদেশে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে কোনও ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ, তদন্ত, অপরাধমূলক কাজের সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে বা অভিযোগে পরোয়ানাসহ বা পরোয়ানা ছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের হেফাজতে নিলে তাকে গ্রেফতার বলা হয়। ফৌজদারী আইনে কাউকে গ্রেফতার করা হলে ২৪ ঘন্টার মধ্যে আদালতে হাজির করতে হয়। 

*গ্রন্থনা: ওয়াজেদ নবী, এডিটর, জুরিস্টিকো ব্লগ। 

You cannot copy content of this page