Feature

বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের গঠন ক্ষমতা ও কার্যাবলি

বাংলাদেশ বার কাউন্সিল আইনজীবীদের বিধিবদ্ধ পেশাগত স্বশাসিত সংগঠন। আইনজীবীদের উন্নয়ন, প্রশিক্ষণ এবং নৈতিকতা রক্ষায় কাজ করে। ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত এই কাউন্সিল আইন পেশায় নৈতিকতা এবং স্বচ্ছতা বজায় রাখতে আইনজীবীদের নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ করে। বাংলাদেশ বার কাউন্সিল রাষ্ট্রপতির আদেশ নং ৪৬ ধারায় গঠিত। (The Bangladesh legal practitioners and bar council order 1972)

বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের গঠন

সভাপতি: বার কাউন্সিলের প্রধান নেতা। বাংলাদেশের এ্যাটর্নি জেনারেল পদাদিকার বলে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সভাপতি হন। সভাপতি আইনজীবীদের মধ্যে প্রভাবশালী ব্যক্তি হন এবং বার কাউন্সিলের কার্যক্রম পরিচালনা করেন।

সহ সভাপতি:- বার কাউন্সিলের নির্বাচিত সদস্যদের দ্বারা গোপন ভোটের মাধ্যমে তাদের মধ্যে থেকে একজন সহ সভাপতি নির্বাচিত হবেন।

সদস্য :- : বার কাউন্সিল সর্বমোট ১৫ জন সদস্য নিয়ে গঠিত হয়।

এটর্নি জেনারেল: বাংলাদেশের এটর্নি জেনারেল পদাধিকার বলে বার কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন।

নির্বাচিত সদস্য: সমগ্র বাংলাদেশের আইনজীবীদের প্রত্যক্ষ ভোটে ৭ জন সদস্য নির্বাচিত হন।

আঞ্চলিক সদস্য: সাতটি অঞ্চল ভিত্তিক বার সমিতির আইনজীবীদের প্রত্যক্ষ ভোটে ৭ জন সদস্য নির্বাচিত হন। সরকার গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই বার সমিতিগুলোকে ৭টি অঞ্চলে বিভক্ত করেছে।

নির্বাচন :- ৩ বছর পর পর বার কাউন্সিল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

 কমিটি 

৩ টি স্থায়ী কমিটি সম্বন্ধে বার কাউন্সিল অর্ডারের ১১ অনুচ্ছেদে এবং নিবন্ধন কমিটি সম্বন্ধে ১১খ অনুচ্ছেদে আলোচনা করা হয়েছে।

              ১. এক্সিকিউটিভ কমিটি (নির্বাহী কমিটি)

  • গঠন: বার কাউন্সিলের নির্বাচিত সদস্যদের মধ্য থেকে ৫ সদস্য।
  • কাজ: পরিচালন কার্যক্রম এবং নীতিনির্ধারণে সহায়তা।

২. ফিন্যান্স কমিটি (আর্থিক কমিটি)

  • গঠন: বার কাউন্সিলের নির্বাচিত সদস্যদের মধ্য থেকে ৫ সদস্য।
  • কাজ: অর্থ ব্যবস্থাপনা ও বাজেট প্রস্তুতি।

৩. লিগ্যাল এডুকেশন কমিটি (আইন শিক্ষা কমিটি)

  • গঠন: ৯ সদস্যের একটি কমিটি, যার মধ্যে ৫ জন বার কাউন্সিলের নির্বাচিত সদস্য এবং ৪ জন অ-নির্বাচিত সদস্য (যার মধ্যে অন্তত ২ জন আইন শিক্ষকের মধ্য থেকে)।
  • কাজ: আইন শিক্ষার উন্নয়ন ও নীতি প্রণয়ন।

৪. এনরোলমেন্ট কমিটি

  • গঠন: ৫ সদস্যের একটি কমিটি, যার চেয়ারম্যান প্রধান বিচারপতির মনোনীত একজন আপীল বিভাগের বিচারপতি, এবং অন্যান্য সদস্য ২ জন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, এটর্নি জেনারেল এবং বার কাউন্সিলের ১ নির্বাচিত সদস্য।
  • কাজ: আইনজীবীদের তালিকাভুক্তি কার্যক্রম পরিচালনা।

৫. অন্যান্য কমিটি:
বার কাউন্সিলের সদস্যরা প্রয়োজনে তাদের কাজের সুবিধার্থে অন্যান্য কমিটি গঠন করে থাকেন। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত:- :

রিফর্ম কমিটি: আইন সংস্কার সম্পর্কিত প্রস্তাবনা ও উদ্যোগ।

হিউম্যান রাইটস এন্ড লিগ্যাল এইড কমিটি: মানবাধিকার ও আইনগত সহায়তার প্রচার ও বাস্তবায়ন।

হাউজ কমিটি: বার কাউন্সিলের অবকাঠামো এবং কার্যক্রম ব্যবস্থাপনা।

রিলিফ কমিটি: দুর্দশাগ্রস্ত আইনজীবীদের সহায়তার জন্য।

রোল এন্ড পাবলিকেশন কমিটি: বার কাউন্সিলের প্রকাশনা ও ডকুমেন্টেশন।

কমপেইন্ট এন্ড ভিজিলেন্স কমিটি: আইনজীবীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গ্রহণ ও তদন্ত।

সচিব/ সেক্রেটারি :- বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে সরকারের দ্বারা নিয়োগকৃত একজন বেতনভুক্ত সচিব/সেক্রেটারি থাকেন। তিনি বার কাউন্সিলের কর্মকর্তা হিসেবে কার্য পরিচালনা করেন। বর্তমানে জেলা জজ বা অতিরিক্ত জেলা জজ পদমর্যাদার কোন কর্মকর্তা বার কাউন্সিলের সচিব/সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন।

 

বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ক্ষমতা কার্যাবলী

বাংলাদেশ বার কাউন্সিল দেশের আইনজীবীদের পেশাগত উন্নয়ন এবং আইন ব্যবস্থার সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে। বার কাউন্সিল অর্ডারের ১০ অনুচ্ছেদে বার কাউন্সিলের কার্যাবলী নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।নিম্নে এর ক্ষমতা ও কার্যাবলী আলোচনা করা হলো:

১. আইনজীবীদের আচরণ বিধি:- বাংলাদেশ বার কাউন্সিল তালিকাভুক্ত আইনজীবীদের জন্য আচরণ বিধি প্রনয়ণ ও নিয়ন্ত্রণ করে, যা তাদের পেশাগত শৃঙ্খলা ও নৈতিকতার মান নিশ্চিত করে।

২. আইনজীবীদের তালিকা তৈরী:-বার কাউন্সিল আইনজীবীদের তালিকা তৈরি ও সংরক্ষণের দায়িত্ব পালন করে, যা আইনজীবীদের পেশাগত পরিচিতি নিশ্চিত করে।

৩. তালিকাভুক্তির পরীক্ষা গ্রহণ:-সারা দেশে আগ্রহী ব্যক্তিদের জন্য আইনজীবী তালিকাভুক্তির পরীক্ষা আয়োজন করা হয়, যা আইন পেশায় প্রবেশের জন্য প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ করে। বার কাউন্সিল অর্ডারের ১১খ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, বার কাউন্সিলের নিবন্ধন কমিটির দায়িত্ব হচ্ছে, এই আইনজীবী অন্তর্ভূত তথা নিবন্ধন বা তালিকাভুক্তি করন।

৪. নির্বাচন অনুষ্ঠান করা:- বার কাউন্সিল নিয়মিত নির্বাচন আয়োজন করে, যা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অংশ।

৫. তহবিলের ব্যবস্থাপনা:- বার কাউন্সিল নিজস্ব তহবিলের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করে, যা সংস্থার কার্যক্রম পরিচালনায় সহায়ক।

৬. আইনজীবীদের সুযোগ-সুবিধা রক্ষা:- তালিকাভুক্ত আইনজীবীদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা রক্ষা এবং স্বার্থ সুরক্ষা নিশ্চিত করে, যা পেশাগত নিরাপত্তা প্রদান করে।

৭. বিভিন্ন কমিটির দায়িত্ব নির্ধারণ:-বার কাউন্সিল বিভিন্ন কমিটির দায়িত্ব নির্ধারণ করে, যা আইনজীবীদের কার্যক্রমের উন্নয়ন ও সুদৃঢ়করণে সহায়ক।

৮. আইন শিক্ষার মান নির্ধারণ:- বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে পরামর্শ করে আইন শিক্ষার মান নির্ধারণ করে, যা আইন শিক্ষার উন্নয়নে সহায়তা করে।

৯. অসদাচরণের জন্য মামলা গ্রহণ: তালিকাভুক্ত আইনজীবীদের পশোগত অসদাচরণের জন্য মামলা গ্রহণ করে এবং তা নিষ্পত্তি করে, যা আইনজীবীদের পেশাগত আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে।

১০. আইনজীবীকে অপসারণ:- যদি কোনো আইনজীবী বার কাউন্সিলের নীতিমালা ভঙ্গ করে, তবে ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে তাকে অপসারণ করা হতে পারে, যা পেশাগত শৃঙ্খলা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ।

 

বাংলাদেশ বার কাউন্সিল দেশের আইনজীবীদের পেশাগত উন্নয়ন এবং শৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে অনন্য প্রতিষ্ঠান। আইনজীবীদের নিবন্ধন, প্রশিক্ষণ এবং দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে তাদের পেশাগত মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বার কাউন্সিল সাধারণ জনগণের জন্য আইনগত সহায়তা নিশ্চিত করে এবং আইনের প্রতি সচেতনতা বৃদ্ধি করে। আইনজীবীদের পেশাগত অধিকার এবং মর্যাদা রক্ষায় অবিচলিত, যা দেশে ন্যায়বিচার ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় সহায়ক।

বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের কার্যক্রম দেশের আইনগত পরিবেশকে শক্তিশালী করতে এবং সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠায় অপরিহার্য।

*লেখক: মারুফ আহসান, রিসার্চ এসোসিয়েট, জুরিস্টিকো।

 

 

আরো পড়ুন- জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের গঠন ক্ষমতা ও কার্যাবলি

You cannot copy content of this page