HomeOpinion

বাংলাদেশে প্রাদেশিক শাসন প্রবর্তনের বাস্তবতা

ড. ইউনূসের নের্তৃত্বাধীন বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন বাংলাদেশকে চারটি প্রদেশে ভাগ করার প্রস্তাব করেছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও সিলেট নামে চারটি অঞ্চলে ভাগ করে চারটি প্রদেশ গঠনের কথা বলা হয়েছে প্রস্তাবে। প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের উদ্দেশ্যে এই প্রস্তাব।

বাংলাদেশে প্রাদেশিক শাসনের প্রয়োজনীয়তা

প্রাদেশিক শাসন ব্যবস্থা সেইসব দেশেই করা হয় যেসকল দেশে বহু ভাষার, বহু ধর্মের কিংবা বহু বর্ণের ও সংস্কৃতির মানুষ বসবাস করে।  বাংলাদেশের প্রায় সকল জনগোষ্ঠীই বাংলা ভাষায় কথা বলে। অন্য কিছু ভাষাভাষী জনগোষ্ঠী থাকলেও তারা বাংলা ভাষা ব্যবহার করে। তাছাড়া দেশের ৯০ শতাংশ মানুষই ইসলাম ধর্মাবলম্বি, বাকি ১০ শতাংশ অন্যান্য ধর্মের। এদের সংস্কৃতিগত বৈশিষ্ট্য প্রায় অভিন্ন। বাংলাদেশ  ৫৬ হাজার বর্গমাইলের ছোট্ট আয়তনের একটি দেশ। ভাষাগত অভিন্নতা, সংস্কৃতিগত অভিন্নতা ও সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা এমনকি আয়তনে ছোট্ট হওয়ার কারণে এদেশে প্রাদেশিক শাসন চালুর জন্য জোরালো দাবী ওঠেনি।  ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার সময় তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানকে চারটি প্রদেশে ভাগ করা হলেও তৎকালীন পূর্বপাকিস্তান (বাংলাদেশ) অংশে কোনও প্রদেশ গঠন করা হয়নি  আয়তন, ধর্ম ও সংস্কৃতিগত অভিন্নতার কারণে।

এককেন্দ্রিক শাসন ব্যবস্থায় তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর শাসন কাঠামোর ভেতর কর্তৃত্ববাদ ও স্বৈরাচার তৈরী হয়। সমগ্র দেশে ক্ষমতাসীন দলের একক আধিপত্য বিস্তার করে। এর একটি উত্তম সমাধান হতে পারে প্রাদেশিক শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে।  স্বৈরাচার রোধের মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশের থেকেও ছোট আয়তনের অনেক দেশে প্রাদেশিক শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়েছে এবং তারা সফলও হয়েছে।

বাংলাদেশকে চারটি প্রদেশে ভাগ করা হয় তাহলে কেন্দ্র অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর হাতে একক ক্ষমতা থাকবে না।  ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ঘটবে। প্রদেশগুলোর হাতে ক্ষমতা বণ্টিত হবে। একেক প্রদেশে একেক দল ক্ষমতায় থাকবে ফলে কেন্দ্র এককভাবে সমগ্র দেশে তার মত ও রাজনৈতিক কর্তৃত্ব চাপিয়ে দিতে পারবে না। যেমন কেন্দ্রীয় সরকারে যদি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকে কিন্তু ঐ সময় যদি চারটি প্রদেশে অন্যান্য দল ক্ষমতায় থাকে তাহলে কেন্দ্রের উপর মোটামোটি চাপ থাকবে। ফলে সহজে স্বৈরাচার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না।

আবার যদি আলাদা আলাদা প্রদেশ থাকে তাহলে ছোটছোট প্রদেশকে প্রাদেশিক সরকার খুব সহজেই পরিচালনা করতে পারবে। বাংলাদেশের অন্যতম একটি সমস্যা হচ্ছে বেকারত্ব সমস্যা।  প্রাদেশিক ব্যবস্থা চালু হয় তাহলে বেকারত্ব অনেকটা লাঘব হবে। প্রাদেশিক প্রশাসনিক ব্যবস্থায় অনেক কর্মসংস্থান তৈরী হবে। জনপ্রতিনিধিদের প্রতিনিধিত্বের এরিয়া ছোট হবে, ফলে সুঁই পরিমাণ সমস্যাও তার চোখে পড়বে। তাছাড়া প্রদেশগুলো নিজেরা স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে প্রতিযোগিতায় নামবে যার ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের অর্থনীতিও চাঙা হবে।

 

বাংলাদেশে প্রাদেশিক শাসন ব্যবস্থার ঝুঁকি

প্রাদেশিক শাসন ব্যবস্থা ভালো উদ্দেশ্য নিয়ে করলেও এর জন্য কিছু ঝুকির সম্মুখীন হবার সম্ভাবনা রয়েছে। দীর্ঘ ১৬ বছরে বিগত স্বৈরাচারী সরকার দেশের অর্থনীতি ভেঙে দিয়ে গেছে।  দেশ ঋণে জর্জরিত। রিজার্ভের পরিমাণও খুব বেশি নয়। এমতাবস্থায় যদি প্রদেশ তৈরী করা হয় তাহলে প্রদেশের রাজধানীসহ প্রদেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সরকারকে অর্থনৈতিকভাবে হিমশিম খেতে হতে পারে। অর্থসংকটের কারণে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন উর্ধ্বগতি হতে পারে।

এছাড়াও এর বড় একটি সমস্যা হচ্ছে- একটা সময় প্রদেশগুলো নিজের স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখতে পারে। যা দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি সৃষ্টি করতে পারে। পার্বত্য চট্টগ্রামে কিছু বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহী গোষ্ঠী আছে, তারা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। এছাড়াও প্রতিবেশি ভারতের ষড়যন্ত্রতো অব্যাহত আছেই।

তবে এসব কিছু প্রতিকূলতার দিক বাদ দিলে প্রাদেশিক শাসন ব্যবস্থার সুফলই বেশি হবে।  আমাদের দেশে যে দলই ক্ষমতায় যায় সে দলই তার ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে বিভিন্ন অনৈতিক পন্থা অবলম্বন করে। এমনকি তারা ক্ষমতাকে প্রলম্বিত করতে দেশের সংবিধানকেও কাটাছেঁড়া করে। তাই বাংলাদেশে চিরকালের জন্য স্বৈরাচার রোধ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় প্রাদেশিক শাসন ব্যবস্থা কার্যকর পদক্ষেপ হতে পারে বলে মনে করি।

*লেখক- রোমন তালুকদার: সাব-এডিটর, জুরিস্টিকো ব্লগ।  

 

আরও পড়ুনবাংলাদেশে ভোক্তা অধিকার সুরক্ষা

You cannot copy content of this page